সংস্কৃতি বিভিন্নভাবেই রাজনৈতিক।
তবে ওই ঐতিহ্যের জের দারুণভাবেই টের পাওয়া যায়, যে ঐতিহ্য তার আঙ্গুলের ইশারায় বা হুকুমে সংস্কৃতির জমিনকে দখল করে ফেলে, যে ঐতিহ্য এভাবে নিজের এলাকা নির্দিষ্ট করার ভেতর দিয়ে তৈরি করে বিভিন্ন ধরণের উঁচু-নিচু বিভাজন, তৈরি করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক শ্রেষ্ঠত্বের ধারনাও। সংস্কৃতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে এখনও শিক্ষিত মধ্যবিত্তের একটা অংশ গদ্গদ হয়ে উনিশ শতকের ইংরেজ কবি ও সমালোচক ম্যাথিউ আর্নল্ড আউড়ান এভাবেঃ "সেরা যা কিছু চিন্তা করা হয়েছে বা বলা হয়েছে, তাই সংস্কৃতি"।
কিন্তু কে কীভাবে ঠিক করে দেয় মানুষের চিন্তার বা বয়ানের বা অনুশীলনের শ্রেষ্ঠত্ব? এখানে "মানুষ" বর্গটা ব্যবহার করা হল, কিন্তু আমি পুরাপুরি ওয়াকেফহাল যে, ওই "মানুষ" বর্গটা পশ্চিমা মানবতাবাদী ঐতিহ্যে প্রায়ই একটা ফাঁকা বুলি হিসাবেই চালু থাকে। তাই প্রশ্নঃ এই মানুষ কারা? আর্নল্ডের ক্ষেত্রে বলা যাবে যে, এই মানুষ হচ্ছে পশ্চিমের শাদা মানুষ, বুর্জোয়া ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এবং এই মানুষ সেই মানুষও, যে বাইবেলের হরফ প্রচার করেছে, হাতে বন্দুক ধরে আদিবাসীদের খুন ঝরিয়ে তাদের মাটি লাল করেছে, আর ক্রীতদাসের শ্রম-ঘাম-রক্তের বিনিময়ে "সভ্যতা" গড়েছে এবং করেছে আরো অনেক কিছু। আর শ্রেষ্ঠত্বের বিচার? শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে ওই আর্নল্ড এবং তার অনুসারীরা নেমেছেন তো বটেই, কিন্তু তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল এই যে, এই বিচারে ভূমিকা রেখেছে দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে-ওঠা একটি সংস্কৃতি।
এই সংস্কৃতিকে আমরা অবশ্যই ইউরোপকেন্দ্রিক বলতে পারি। এই সংস্কৃতি কমপক্ষে পাঁচশ বছরের বেশি সময় ধরে প্রথমত নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে বিভিন্নভাবে উদযাপন করেছে এবং শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি ও নিরিখও তৈরি করে' উপনিবেশবাদের সুবাদেই পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় তাদের ন্যায্যতা জারি রাখার চেষ্টা করেছে। এমনকি দুর্দান্ত প্রতিভাবান কবি গ্যেটে "জাতীয় সাহিত্য"কে ধিক্কার দিয়ে "বিশ্বসাহিত্য"-এর—বা মূল জর্মনে "Weltliteratur"-এর—ধারণাকে সামনে এনে ওই বিশ্বের কেন্দ্রে বসিয়েছেন ওই ইউরোপকেই, তার মাথায় মুকুট পরিয়েই। এই সংস্কৃতির ইতিহাসে অনেক পালাবদল ঘটেছে বটে, তবে তার "হেজিমনি" এখন তার মার্কিনায়িত ভার্সন জারি রেখেছে "গোলকায়ন"-এর সুবাদেই।
0 comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.