মার্থা ভিয়ানুয়েভা: পুরুষতন্ত্রের তোমরা যারা - আজফার হোসেন
মার্থা ভিয়ানুয়েভা লাতিন আমেরিকার নারীবাদী কবি। কবিতাটি তর্জমা করেছেন অধ্যাপক ও অনুবাদক আজফার হোসেন।ভীষণ উপুর-করা দুপুর খাঁ খাঁ, আমার দেহ ঝলসে যায়
আর আমার চামড়ার ওপর তোমাদের স্পর্শরা তাঁবু গাড়ে।
রঙমহলের অবিরত উৎসবে আপাদমস্তক ঝলসে যায়,
ঝলসে ঝলসে ঝলসে যায়; ঝলসে ঝলসে ঝলসে যায়।
হা হা হাহাকারে মরু হাওয়ায় ভেসে যাওয়া ধবনি সব আর্তনাদ করে,
তাদের গতরে গতরে মাটির আদিম গন্ধ, ঢেউ-তোলা কারুকাজে
শ্রমের গন্ধ, শিশুর নাড়িতে তারই অন্তরের ধুকপুক ধুকপুক ধুকপুক,
সেও ঝাঁ ঝাঁ ঝলসানো দুপুরে; এরপরও বলো, তাদের ইতিহাস কই?
তারপরও নৈঃশব্দকে করাত দিয়ে চিরে চিরে তারাই তো দেখায় ইতিহাস।
তেপান্নটি অলিগলি মাড়িয়ে সবাই যখন ভরাট রাতের মুখোমুখি
তোমাদের দিনে দিনে বেড়ে ওঠা সাজানো-গোছানো অন্ধকারে
ভিক্ষা শেখানো শিক্ষায় কেবলি তর্জনি নির্দেশ, কেবলি রক্তচক্ষু
কিংবা শুধুই সূর্য ঢেকে দেয়া রক্তপাত বা বন্দুক-বুলেট-বেয়োনেট।
তোমাদের শিক্ষা শেখায় ভিক্ষা
তোমাদের শিক্ষা শেখায় ভিক্ষা
তোমাদের শিক্ষা শেখায় ভিক্ষা
পুঁজি শেখায় ভিক্ষা
উপনিবেশ শেখায় ভিক্ষা
বিশ্বব্যাংক শেখায় ভিক্ষা
পুরুষালি আইন শেখায় ভিক্ষা
অর্জনে
তর্জনে
গর্জনে
বর্ষণে
ভিক্ষা
ভিক্ষা
ভিক্ষা
বিশেষ্য থেকে সর্বনামে কিংবা ক্রিয়াপদের চঞ্চল আবাহনে
তোমাদের তাবৎ আখ্যানের পরতে পরতে ক্ষমতার ক্ষ্যাপা দাপটে
শীতের চাবুকে চাবুকে, মসজিদের প্রবেশ পথে, ভিক্ষাপাত্র হাতে
কঙ্কালসার দেহ নারী থাকে, ঘুরপাক খায়, আবারো ছোটে সে।
থাকে সে তোমাদের তাবৎ জাল-ফেলা জ্যামিতির ভেতরে ভেতরে,
যেমন তোমাদের হে হে করা পুরুষালি জাতীয়তাবাদে
কিংবা ঘেউ ঘেউ করা পেশী-ফোলানো নন্দনতত্ত্বে বারবার
মাটি নারী হয়, নারী হয় নদী, নারী হয় নক্ষত্র, নারী হয় জাতি-
কিন্তু কার থাবায় দাউ দাউ জ্বলে সেই নদী-নক্ষত্র-জাতি-দেশ?
কার আততায়ী ইশারায় তছনছ সেই দেহ, সেই মাটি, সেই ভিটে?
বচনে বসনে বিজ্ঞাপনে বিপণনে সাবানের রকমারি-ঝকমারিতে
কিংবা কোকাকোলা-পেপসির ফুঁসে ওঠা ফেনায় ফেনায়
দেহ বিকোনোর দালালদের তকমায় তকমায়, জোব্বা-পরা মুরুব্বিদের
শাস্ত্রে শাস্ত্রে, ভণ্ডামির পিঠে পিঠে আমরা দেখি শ্রমবিদ্ধ নারী,
গুলিবিদ্ধ নারী, এমনকি তোমাদের উপমা-রূপক-বিদ্ধ নারী,
আর ওই দেবদূতের গান পান করে এখন মশগুল হরেক রকম কর্তা।
কিন্তু দেশের শস্যের দানায় দানায় নারী, ক্ষেতে-মাঠে-মিলে-
কারখানায় নারী, একেবারে বাড়ির ভেতরে ভেতরে নারী,
তোমার সন্তানের পাতে পাতে নারী, উন্নয়নবিশারদের বানোয়াট
পরিসংখ্যানে-পরিসংখ্যানে নারী, শাসনতন্ত্রের মার্জিনে নারী,
প্লেটো-এরিস্টটল-দেকার্ত-ফ্রয়েডের পাদটীকায় নারী,
আবার জেগে ওঠা ভোরের ফেটে পড়া রক্তলাল আলোতে নারী,
কিংবা রাস্তায় ঝরা টকটকে গোলাপের মতো অঢেল রক্তে নারী,
বিস্ফোরকের মতো টগবগ করা আগুন-ধরা ভাষণে ভাষণে নারী
নারী নারী নারী নারী নারী নারী নারী নারী নারী নারী নারী মার্চে নারী
আর উজ্জ্বল সময়ের সংকেতে আমরা নিশ্চিহ্ন করবো তোমাদেরঃ
আমরা আছি
আমরা আছি
আমরা আছি
আমরা আছি
এই পরিচিত ইতিহাসেই
আমাদের মুছে ফেলা সব আখ্যানকে
আগ্নেয়গিরি বানাবার এই লড়াইয়ে
আমরা আছি।
0 comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.