মানিক বাস্তবতাবাদের এক অসাধারণ রূপকার || আজফার হোসেন
সমকালীন মানিক-আলোচনায় এখনো কেউ কেউ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতেটাকে হাতড়িয়ে বেড়ান ‘বাস্তবতাবাদ’ নামের এক জারি-থাকা জাহিরি বর্গে। এদের তর্জনি নির্দেশে যেন মুহূর্তেই মানিকের পরিচয়টা নির্দিষ্ট হয়ে যায়: ‘মানিক বাস্তবতাবাদের এক অসাধারণ রূপকার।’ তবে এই বৃত্তায়ন কতটুকু মানিককে চিনিয়ে দেয়, তাও আজ প্রশ্নের মুখোমুখি। কারণ ‘রিয়েলিজম’ বা বাস্তবতাবাদকে শিল্পের সঙ্গে কোনো রৈখিক সম্পর্ক বেঁধে ফেলার ক্ষেত্রে শিল্পের বিশ্ব-ইতিহাস নিজেই আর সায় দেয় না। শিল্পের চলমান ইতিহাসই তো বলে দেয় যে, শিল্প যেতে পারে মানুষের বস্তুজগতের ও চেতনার বিভিন্ন জায়গায়, বাস্তবতা থেকে বাস্তবতায়, এমনকি কল্পনায় বদলে-যাওয়া বাস্তবতায়।
অর্থাৎ যাকে আমরা 'বাস্তবতা' বলি, তার সঙ্গে শিল্পের বিভিন্ন ধরনেরই সম্পর্ক থাকে, যদি আমরা শিল্পের ঐতিহাসিকতা ও বস্তুকতাকে বিবেচনায় রাখি, যেমন _দ্য জার্মান আইডিয়লজি_-তে মার্কস ও এঙ্গেলস এর বয়ান মোতাবেক ‘ভাষা নিজেই বস্তজগতের ভারে ভারাক্রান্ত থাকে।’ আবার কোনো পরিচিত, প্রচলিত, এমনকি নিজের চোখ দিয়ে চট করে দেখে নেওয়ার মতো বাস্তবতার সঙ্গে শিল্পের সম্পর্ক হতে পারে বিরোধেরও। এ ভাবে শিল্প ওই বাস্তবতাকে দুমড়াতে পারে,মোচড়াতে পারে, চ্যাপ্টা করতে পারে, এমনকি বদলাতেও পারে। মানিকের কথাশিল্পের সঙ্গে বাস্তবতার সম্পর্কটা মোটামুটি এ ধরনেরই, তার লেখক জীবনের প্রায় শুরু থেকেই।
যে কথাটা বোঝাতে চাইছি, তা হলো এই যে, মানিক বাস্তবতার কথা শুধু বলেনই না; না, বাস্তবতাকে শুধু ‘রিপ্রেজেন্ট’ করার বিশ্বস্ত দায়ভার কাঁধে নিয়ে এগিয়ে যাবার জন্য তিনি বোধকরি লেখেননি; বাস্তবতাকে বদলাবার দারুন এক তাগিদও কাজ করেছে তার ভেতরে। ওই তাগিদটা ধরা পড়ে তার ভাষার রাজনীতিতে।
জোর দিয়েই বলা দরকার, শিল্পীর বদলানোর কাজটা একজন রাজনৈতিক অ্যাকটিভিস্টের বদলানোর কাজের মতো অবশ্যই নয়; তেমন যে হতেই হবে, তাও নয়। শিল্পীর এ কাজটা স্থূল অর্থে উচ্চকিত ও প্রকাশ্য নাও হতে পারে। তবে কাজটা চলতে থাকে ভাষায়, ফর্মে, চিহ্নের আঘাতে আঘাতে এবং সোজা কথায় প্রচলিত বাস্তবতাকে ‘সাবভার্ট’ করার বিভিন্ন আয়োজনে। সেই বিবেচনায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাস্তবতার নিছক প্রতিফলক নন। তিনি সেই বাস্তবতাকে বদলাবার জন্য বিভিন্ন সম্ভাবনাকে এমনভাবে পরখ করেন যে, নিছক ‘বাস্তবতাবাদী’র লেবেল এঁটে মানিককে চিহ্নিত করার অর্থ দাঁড়ায় তার সৃজনশীল ও ভাঙনপ্রত্যাশী ভাষিক ও রাজনৈতিক শক্তিকে রীতিমতো হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করা। একে বলা যায়, লেবেলের পুলিশি।
আর এ-ধরনের পুলিশির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই তো রাজনৈতিকভাবে লিপ্ত ফিলিস্তিনি কবি রাশিদ হোসেন একবার বলেছিলেন, ‘একশজন রাজনীতিকের একশটি বক্তৃতার চেয়ে মাত্র একটি গর্জে-ওঠা কিংবা টগবগ-করা কবিতা মানুষকে বেশি নাড়া দিতে পারে।সেই জন্য অবশ্য কবিতার মতো কবিতা চাই।’
অর্থাৎ যাকে আমরা 'বাস্তবতা' বলি, তার সঙ্গে শিল্পের বিভিন্ন ধরনেরই সম্পর্ক থাকে, যদি আমরা শিল্পের ঐতিহাসিকতা ও বস্তুকতাকে বিবেচনায় রাখি, যেমন _দ্য জার্মান আইডিয়লজি_-তে মার্কস ও এঙ্গেলস এর বয়ান মোতাবেক ‘ভাষা নিজেই বস্তজগতের ভারে ভারাক্রান্ত থাকে।’ আবার কোনো পরিচিত, প্রচলিত, এমনকি নিজের চোখ দিয়ে চট করে দেখে নেওয়ার মতো বাস্তবতার সঙ্গে শিল্পের সম্পর্ক হতে পারে বিরোধেরও। এ ভাবে শিল্প ওই বাস্তবতাকে দুমড়াতে পারে,মোচড়াতে পারে, চ্যাপ্টা করতে পারে, এমনকি বদলাতেও পারে। মানিকের কথাশিল্পের সঙ্গে বাস্তবতার সম্পর্কটা মোটামুটি এ ধরনেরই, তার লেখক জীবনের প্রায় শুরু থেকেই।
যে কথাটা বোঝাতে চাইছি, তা হলো এই যে, মানিক বাস্তবতার কথা শুধু বলেনই না; না, বাস্তবতাকে শুধু ‘রিপ্রেজেন্ট’ করার বিশ্বস্ত দায়ভার কাঁধে নিয়ে এগিয়ে যাবার জন্য তিনি বোধকরি লেখেননি; বাস্তবতাকে বদলাবার দারুন এক তাগিদও কাজ করেছে তার ভেতরে। ওই তাগিদটা ধরা পড়ে তার ভাষার রাজনীতিতে।
জোর দিয়েই বলা দরকার, শিল্পীর বদলানোর কাজটা একজন রাজনৈতিক অ্যাকটিভিস্টের বদলানোর কাজের মতো অবশ্যই নয়; তেমন যে হতেই হবে, তাও নয়। শিল্পীর এ কাজটা স্থূল অর্থে উচ্চকিত ও প্রকাশ্য নাও হতে পারে। তবে কাজটা চলতে থাকে ভাষায়, ফর্মে, চিহ্নের আঘাতে আঘাতে এবং সোজা কথায় প্রচলিত বাস্তবতাকে ‘সাবভার্ট’ করার বিভিন্ন আয়োজনে। সেই বিবেচনায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাস্তবতার নিছক প্রতিফলক নন। তিনি সেই বাস্তবতাকে বদলাবার জন্য বিভিন্ন সম্ভাবনাকে এমনভাবে পরখ করেন যে, নিছক ‘বাস্তবতাবাদী’র লেবেল এঁটে মানিককে চিহ্নিত করার অর্থ দাঁড়ায় তার সৃজনশীল ও ভাঙনপ্রত্যাশী ভাষিক ও রাজনৈতিক শক্তিকে রীতিমতো হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করা। একে বলা যায়, লেবেলের পুলিশি।
আর এ-ধরনের পুলিশির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই তো রাজনৈতিকভাবে লিপ্ত ফিলিস্তিনি কবি রাশিদ হোসেন একবার বলেছিলেন, ‘একশজন রাজনীতিকের একশটি বক্তৃতার চেয়ে মাত্র একটি গর্জে-ওঠা কিংবা টগবগ-করা কবিতা মানুষকে বেশি নাড়া দিতে পারে।সেই জন্য অবশ্য কবিতার মতো কবিতা চাই।’
0 comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.