[উন্নাসিক কবিতা-পাঠক, সমালোচক আর গবেষকদের নিয়ে আমার তর্জমায় পাবলো নেরুদার একটা কবিতা পোস্ট করলাম এখানে। বলা দরকার, মূল হিস্পানি কবিতা ও তা...

সমালোচনাগাথা | মুলঃ পাবলো নেরুদা | অনুবাদঃ আজফার হোসেন

11:30 AM Editor 0 Comments

[উন্নাসিক কবিতা-পাঠক, সমালোচক আর গবেষকদের নিয়ে আমার তর্জমায় পাবলো নেরুদার একটা কবিতা পোস্ট করলাম এখানে। বলা দরকার, মূল হিস্পানি কবিতা ও তার একাধিক ইংরেজি অনুবাদ অনুসরণ করলেও ক্ষেত্রবিশেষে আমি ইচ্ছা করেই ভাবানুবাদে গিয়েছি এবং প্রকাশের স্বার্থেই অনেক ক্ষেত্রেই মূল থেকে আলাদা যতিচিহ্ন ব্যবহার করেছি।]
সমালোচনাগাথা
মুলঃ পাবলো নেরুদা
অনুবাদঃ আজফার হোসেন
পাঁচটা কবিতা লিখেছিলামঃ
একটা ছিল সবুজ
আরেকটা ছিল গোলগাল গমের রুটির টুকরা
তৃতীয়টা ছিল একটা বাড়ি, একটা ইমারত
চার নম্বরটা ছিল একটা আঙটি
আর পঞ্চমটা ছিল বিদ্যুতের ঝলকানির মত অল্প মুহূর্তের
এবং যেহেতু কবিতা লিখেছিলাম
সে নিজেই আমার হেতু-কে ছাপ দিয়ে আমার কথা জানান দিল।
তো, পুরুষ
আর নারী
এল আর গেল
আর সঙ্গে নিয়ে চলল
আমার সহজ সরল সঞ্চয়—
হালকা বাতাস, ঢেউ-খেলানো বাতাস,
বর্ণচ্ছটা, কাদা, কাঠ
আর এইসব সাধারণ জিনিসপত্র দিয়েই
বানালো
দেয়াল, মেঝে আর স্বপ্ন।
আমার কবিতার একটি পঙতির ওপর
তারা ঝুলিয়ে রাখল সূর্যের আলোতে ভেজা কাপড়।
আমার শব্দগুলো হয়ে উঠল তাদের রাতের খাবার।
আমার শব্দগুলোকে রেখে দিল তারা
মাথার বালিশের পাশে।
কবিতার সঙ্গে শুরু হল তাদের বসবাস,
শুরু হল বসবাস সেই আলোর সঙ্গে
যে আলো আমার পাশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।
তখন
এল এক নিঃশব্দ সমালোচক।
তারপর এল বাচালের পাল
এবং এল আরও অনেকেই—
কেউ কানা, কেউ নাকি সব দেখে, সর্বদ্রষ্টা,
তাদের মধ্যে কেউ কেউ দারুণ মার্জিত পরিচ্ছন্ন রুচিবান
কেউ কেউ এমনকি লাল জুতার বর্ণচ্ছটার মত উজ্জ্বল
কেউ কেউ লাশের মত কাপড়চোপড়ে ভীষণ পরিপূর্ণ।
কেউ কেউ আবার হাসিনা-খালেদার
আর তাদের উন্নীত রাজতন্ত্রের
দলবাজি করছিল,
কেউ কেউ মার্কস মহাশয়ের ঘন দীর্ঘ ভুরূতে
আটকে গিয়ে আর ঝুলে থেকে
তার দাড়িতে ঠ্যাং দিয়ে লাথি মেরে যাচ্ছিল।
কেউ কেউ ইংরেজ
পুরাদস্তুর ইংরেজ
এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ
দাঁত আর ছুরি নিয়ে
ঢাউস অভিধান আর গুপ্ত অস্ত্র নিয়ে
মাননীয় উদ্ধৃতিসমূহের কুচকাওয়াজ নিয়ে
কবিতা পড়ার যাত্রা শুরু করল।
তারা কবিতা পড়ার যাত্রা শুরু করল,
যে মানুষগুলো আমার কবিতা ভালবাসত
সেই সহজ সরল সুন্দর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে
আমার কবিতাকে ছিনতাই করার জন্য।
তারা কবিতাকে ফাঁদে ফেলে মস্করায় মেতে থাকল।
তারা কবিতাকে ঠোঙ্গা বানাল,
তারা কবিতার ভিতরে কয়েকশ’ পিন ঢুকিয়ে তাকে
নিরাপদে রাখতে চাইল তাদের জন্য।
কবিতাকে ঢেকে রাখল কঙ্কালের ঝুরঝুরি দিয়ে
অথবা কবিতাকে কালির মধ্যে চুবাতে থাকল,
বিড়ালের বদান্যতার নামে কবিতার ওপর থুতুও ছিঁটাল।
কবিতাকে ব্যবহার করল ঘড়ি মোড়াবার কাপড় হিসাবে।
মনে করলো তারা কবিতাকে রক্ষা করে যাচ্ছে এভাবে।
কাঁচা তেলের সঙ্গে কবিতাকেও তারা মজুদ করল
আর কবিতাকে উৎসর্গ করে চলল
তাদের স্যাঁতসেঁতে রচনাবলী কিংবা অভিসন্দর্ভ।
তারা মাঝেমাঝে দুধ দিয়ে কবিতা সিদ্ধ করল,
নুড়ি দিয়ে কবিতাকে গোসলও করাল।
আর এই প্রক্রিয়ায় কবিতা থেকে মুছে ফেলল
তার জ্বলজ্বলে স্বরবর্ণ, তার শব্দের টুকরো, তার দীর্ঘশ্বাস।
কবিতাকে তারা প্রায় খুন করে বসল।
তারা কবিতাকে দুমড়িয়ে-মুচড়িয়ে হাত-পা বেঁধে রেখে দিল
একটা প্যাকেটে।
তারপর কবিতায় থাকা চিলেকোঠা আর গোরস্থানকে
সম্বোধন করল।
তারপর
একের পর এক তারা অবসর নিল—
পাগলের মত ক্ষেপে উঠল আমার উপর
কারণ আমি তাদের জন্য যথেষ্ট ‘জনপ্রিয়’ নই।
অথবা আমার কবিতায় নিয়মমাফিক ভুতুড়েপনার অভাবের প্রতি
খানিকটা ঘৃণায় কাতর হয়ে
তারা বিদায় নিল।
সকলেই।
এবং তারপর
আরও একবার
নারী আর পুরুষ
এল
আমার কবিতার সঙ্গে
থাকবে বলে।
আরও একবার
তারা জ্বালাল আগুন
গড়ে তুলল ঘরবাড়ি
বানাল রুটি
ভাগাভাগি করে নিল
আলো সূর্য মাটি কাদা কাঠ
এবং ভালোবাসায়
বিদ্যুতের ঝলকানির সঙ্গে
আঙটির সঙ্গে
যোগ দিল।
এবং এখনঃ
ভদ্রমহোদয়গণ!
গোস্তাকি মাফ করবেন
এই গল্প থামানোর জন্য।
কেননা আমি নিজেই চলে যাচ্ছি চিরতরে—
ওই সহজ সরল সুন্দর সাধারণ মানুষের
সঙ্গে চিরকাল থাকার জন্যই।

0 comments:

Note: Only a member of this blog may post a comment.