এমে সেজেয়ার || আজফার হোসেন
এমে সেজেয়ার!
শুধু ক্যারিবীয় সাহিত্য ও রাজনীতিতে কেন, কিংবা শুধু আফ্রিকার সাহিত্যেই-বা কেন, বলা যাবে যে, গোটা এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার সাহিত্য ও রাজনীতির পরিসরেই এই ক্যারিবীয় কবি-তাত্ত্বিক-অ্যাক্টিভিস্ট এমে সেজেয়ারের বয়ান ও জবান একইসঙ্গে টগবগ করে ফুটছে ইতিহাসের চুল্লিতে। এই বয়ান ও জবান একইসঙ্গে এখনও দেখিয়ে দিচ্ছে কীভাবে কবিতা ও তত্ত্ব যুগপৎ বিস্ফোরণের আকার ধারণ করে; কিভাবে একেকটি শব্দ হাতবোমা হয়ে নিক্ষিপ্ত হয় পশ্চিমা অধিবিদ্যা আর পশ্চিমা মানবতাবাদের ঝলমলে রেটোরিকের চোখে মুখে; কীভাবে ‘সমুদ্রের মতো ঝাঁপিয়ে পড়া চিত্রকল্প সব’ (সেজেয়ারের নিজস্ব ভাষ্য) করে রব যুগ-যগ জমাট-বাঁধা নৈঃশব্দের গভীরে; এবং কীভাবে অচেতন নিজেই হয়ে ওঠে ভাষার মতো, যে ভাষায় আফ্রিকা খুঁজে পায় তার দেহ, যে ভাষায় পৃথিবীর তাবৎ কালো মানুষের ক্ষোভ, ধিক্কার, বিকার, যন্ত্রণা, আর্তনাদ, হতাশা, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সৃষ্টি-সুখের উল্লাস, আত্মাবিষ্কারের আনন্দ ইত্যাদি বিভিন্ন চেহারায় উপস্থিত হয়ে ইতিহাসকে হেগেলীয় বর্ণবাদী ইউরোপকেন্দ্রিকতার বাইরে নিয়ে আসে।
হাঁ, পশ্চিমা মেটাফিজিকসের বর্ণবাদী ও ইউরোপকেন্দ্রিক সংস্করণের অন্যতম প্রতিনিধি হেগেলের সঙ্গে তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিরোধে জড়িয়ে থাকেন এমে সেজেয়ারসহ একাধিক কালো লেখক--সেই ক্যারিবীয় ঔপন্যাসিক জর্জ ল্যামিং থেকে শুরু করে কেনিয়ার ঔপন্যাসিক-নাট্যকার তাত্ত্বিক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো। তবে ফিরে আসা যাক এমে সেজেয়ারের জবান ও বয়ান প্রসঙ্গে।
ওই জবান ও বয়ানের মৃত্যুহীনতা নিয়ে এক তরুণ কালো কবির কিছু পঙক্তি উপস্থিত করা যায়। কিউবার কবি। কিউবার বাইরে তেমন পরিচিত নন। নাম ভিক্তর বেম্বা। আমার দ্রুত অনুবাদে তাঁর কয়েকটি পঙক্তি:
সেজেয়ার, তোমার শব্দ সব জ্বলে দাউদাউ
তোমার শব্দ সব গর্জে ওঠে নৈঃশব্দ্যের
আঁধার-চেরা দিগন্ত ভেদ করে, তোমার শব্দ সব
ইতিহাসের কক্ষপথ থেকে উঠে এসে বলে যায়:
‘আমরা আছি, আমরা থাকব, এইখানে, যুদ্ধে’।
বুলেটের খোঁচায় রক্তাক্ত তোমার শব্দ সব,
তোমার শব্দ সব তারপরও মার্চ করে অন্তহীন।
কবিতায় বেম্বার ভাষ্য হেগেলের টুপি-পরা বুর্জোয়া নন্দনতাত্ত্বিকদের ইঙ্গিতজ্ঞাপকতার মানদন্ডে যুৎসই ঠেকবেনা জানি। তবে বেম্বা স্পষ্টতই লক্ষ্য করেছেন সেজেয়ারের লড়াকু কাব্যতত্ত্বকেই। এ কাব্যতত্ত্বের মূল কথাটা তৃতীয় বিশ্বের আরেক লড়াকু কবি, লাতিন আমেরিকার অর্থাৎ এল সালভেদরের কমিউনিষ্ট কবি রোকে ডালটনের সেই বিখ্যাত 'মিলিট্যান্ট পোয়েটিকস'-এর সুবাদে এভাবে সাজিয়ে বলে নিতে চাই: ক্ষমতা-দখলের গুরুত্বপূর্ণ (একমাত্র না হলেও) শর্ত হচ্ছে ভাষা-দখল, কেননা ক্ষমতা-সম্পর্ক নিজেই যেমন ভাষা-সম্পর্ক, তেমনি ভাষা সম্পর্কও ক্ষমতা সম্পর্ক বটে।
এই ভাষা-দখলের ও ভাষা-সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজটাকেই এগিয়ে নিয়ে গেছেন ক্যারিবীয় কবি-তাত্ত্বিক-আ্যাক্টিভিস্ট এমে সেজেয়ার। তবে তাঁর জন্য কেবল ক্ষমতা নয়; ভাষা হচ্ছে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ-উপনিবেশবাদ- বিরোধী লড়াইয়ের মোক্ষম অস্ত্র ও ক্ষেত্র।
শুধু ক্যারিবীয় সাহিত্য ও রাজনীতিতে কেন, কিংবা শুধু আফ্রিকার সাহিত্যেই-বা কেন, বলা যাবে যে, গোটা এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার সাহিত্য ও রাজনীতির পরিসরেই এই ক্যারিবীয় কবি-তাত্ত্বিক-অ্যাক্টিভিস্ট এমে সেজেয়ারের বয়ান ও জবান একইসঙ্গে টগবগ করে ফুটছে ইতিহাসের চুল্লিতে। এই বয়ান ও জবান একইসঙ্গে এখনও দেখিয়ে দিচ্ছে কীভাবে কবিতা ও তত্ত্ব যুগপৎ বিস্ফোরণের আকার ধারণ করে; কিভাবে একেকটি শব্দ হাতবোমা হয়ে নিক্ষিপ্ত হয় পশ্চিমা অধিবিদ্যা আর পশ্চিমা মানবতাবাদের ঝলমলে রেটোরিকের চোখে মুখে; কীভাবে ‘সমুদ্রের মতো ঝাঁপিয়ে পড়া চিত্রকল্প সব’ (সেজেয়ারের নিজস্ব ভাষ্য) করে রব যুগ-যগ জমাট-বাঁধা নৈঃশব্দের গভীরে; এবং কীভাবে অচেতন নিজেই হয়ে ওঠে ভাষার মতো, যে ভাষায় আফ্রিকা খুঁজে পায় তার দেহ, যে ভাষায় পৃথিবীর তাবৎ কালো মানুষের ক্ষোভ, ধিক্কার, বিকার, যন্ত্রণা, আর্তনাদ, হতাশা, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সৃষ্টি-সুখের উল্লাস, আত্মাবিষ্কারের আনন্দ ইত্যাদি বিভিন্ন চেহারায় উপস্থিত হয়ে ইতিহাসকে হেগেলীয় বর্ণবাদী ইউরোপকেন্দ্রিকতার বাইরে নিয়ে আসে।
হাঁ, পশ্চিমা মেটাফিজিকসের বর্ণবাদী ও ইউরোপকেন্দ্রিক সংস্করণের অন্যতম প্রতিনিধি হেগেলের সঙ্গে তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিরোধে জড়িয়ে থাকেন এমে সেজেয়ারসহ একাধিক কালো লেখক--সেই ক্যারিবীয় ঔপন্যাসিক জর্জ ল্যামিং থেকে শুরু করে কেনিয়ার ঔপন্যাসিক-নাট্যকার তাত্ত্বিক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো। তবে ফিরে আসা যাক এমে সেজেয়ারের জবান ও বয়ান প্রসঙ্গে।
ওই জবান ও বয়ানের মৃত্যুহীনতা নিয়ে এক তরুণ কালো কবির কিছু পঙক্তি উপস্থিত করা যায়। কিউবার কবি। কিউবার বাইরে তেমন পরিচিত নন। নাম ভিক্তর বেম্বা। আমার দ্রুত অনুবাদে তাঁর কয়েকটি পঙক্তি:
সেজেয়ার, তোমার শব্দ সব জ্বলে দাউদাউ
তোমার শব্দ সব গর্জে ওঠে নৈঃশব্দ্যের
আঁধার-চেরা দিগন্ত ভেদ করে, তোমার শব্দ সব
ইতিহাসের কক্ষপথ থেকে উঠে এসে বলে যায়:
‘আমরা আছি, আমরা থাকব, এইখানে, যুদ্ধে’।
বুলেটের খোঁচায় রক্তাক্ত তোমার শব্দ সব,
তোমার শব্দ সব তারপরও মার্চ করে অন্তহীন।
কবিতায় বেম্বার ভাষ্য হেগেলের টুপি-পরা বুর্জোয়া নন্দনতাত্ত্বিকদের ইঙ্গিতজ্ঞাপকতার মানদন্ডে যুৎসই ঠেকবেনা জানি। তবে বেম্বা স্পষ্টতই লক্ষ্য করেছেন সেজেয়ারের লড়াকু কাব্যতত্ত্বকেই। এ কাব্যতত্ত্বের মূল কথাটা তৃতীয় বিশ্বের আরেক লড়াকু কবি, লাতিন আমেরিকার অর্থাৎ এল সালভেদরের কমিউনিষ্ট কবি রোকে ডালটনের সেই বিখ্যাত 'মিলিট্যান্ট পোয়েটিকস'-এর সুবাদে এভাবে সাজিয়ে বলে নিতে চাই: ক্ষমতা-দখলের গুরুত্বপূর্ণ (একমাত্র না হলেও) শর্ত হচ্ছে ভাষা-দখল, কেননা ক্ষমতা-সম্পর্ক নিজেই যেমন ভাষা-সম্পর্ক, তেমনি ভাষা সম্পর্কও ক্ষমতা সম্পর্ক বটে।
এই ভাষা-দখলের ও ভাষা-সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাজটাকেই এগিয়ে নিয়ে গেছেন ক্যারিবীয় কবি-তাত্ত্বিক-আ্যাক্টিভিস্ট এমে সেজেয়ার। তবে তাঁর জন্য কেবল ক্ষমতা নয়; ভাষা হচ্ছে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ-উপনিবেশবাদ- বিরোধী লড়াইয়ের মোক্ষম অস্ত্র ও ক্ষেত্র।
0 comments:
Note: Only a member of this blog may post a comment.