মূল:জ্যাক হার্শম্যান তরজমা: আজফার হোসেন সংবাদ উদ্বাস্তু রাত নামছে আমাদের সকলের ভেতরে। অমনোযোগী প্রতিজ্ঞারা গেড়ে বসে থমকে-যাওয়া দেয়ালের ধার...

জ্যাক হার্শম্যানের পাঁচটি কবিতা || আজফার হোসেন

9:08 AM Editor 0 Comments



মূল:জ্যাক হার্শম্যান
তরজমা: আজফার হোসেন
সংবাদ
উদ্বাস্তু রাত
নামছে
আমাদের সকলের ভেতরে।
অমনোযোগী প্রতিজ্ঞারা
গেড়ে বসে থমকে-যাওয়া
দেয়ালের ধারে।
প্রত্যাশা সব হয়ে ওঠে খানাখন্দময়
প্রতিদিনের মেরে-দেয়া
পকেটে।
আমরা কথা বলি আর আমাদের
কান পেতে শুনে নেয়
ভাড়াটে কেউ—
যাকে লাগিয়ে রাখা হয়েছে
ইঁদুরের মত কুকুরের বছরে।
বাগ্মী মৃতদেহ
দুনিয়াদারিতে মরা মুখ
খোলে। তার জানা সব কিছু
বেমালুম বেরিয়ে আসে:
মুনাফা! মুনাফা!
কালু মিয়া মরে আবর্জনার
স্তুপের কিনারে,
জরিনা বিবি বাস করে
কোনো একটার ভেতরে।
পাঁচ পাঁচটা স্কুল
তাদের দরজা বন্ধ করে
শিশুদের ওপর, যেখানে এক্সন তার
৩৬০০ কোটি টাকার মুনাফা ঘোষণা করে
হে, মেয়র মহাশয় ও তত্ত্বাবধায়ক! শোনেন—
আমজনতা চায়
মৃতদেহটাকে আপনারা বাগে আনেন,
যাতে সে আর
শহরময় গন্ধ না ছড়ায়
তবে অবশ্যই কাশতে থাকুক—
কাশতে থাকুক—
যতক্ষণ না সে ফিরে আসে
মানুষের মত মানুষের জীবনে।
উদ্বাস্তু রাতে
এমনকি প্রকোষ্ঠের
আঙ্গুল সব অন্ধকারময় হয়ে ওঠে
চাকরি হারানোর ভয়ে, যুদ্ধ
আর মিথ্যা আর মুনাফার
অশ্লীল যন্ত্র,
আমাদের হারানো ধৈর্য বাঁধ ভেঙ্গে
দৌড়িয়ে রাস্তায় বেরোচ্ছে
আর চিৎকার করে বলছে:
এ পর্যন্ত! এ পর্যন্ত!
“আমরা কিছুই হতে পারিনি
আমরাই হব সব”
(চালিয়ে যাও পরের পৃষ্ঠায়
পরবর্তী দাবি নিয়ে,
পরবর্তী অ্যাকশানে, চালিয়ে যাও…)
ক্ষুধার বাড়িতে
এই ক্ষুধার বাড়িতে
লক্ষ লক্ষ বাচ্চা কাচ্চা থাকে
তাদের মূল্য কেবল
সকালের নাশতা আর মধ্যাহ্নভোজের সমান।
মটু এক্সন আর বেকটেল-এ
কোটি কোটি টাকা থাকে
কী সুন্দর মুনাফা ধার্য হয়
রাজকীয় মৃত্যুর আগে!
ব্যাংকগুলো রি রি করে
গোঁয়ার লোভের দারুণ দুর্গন্ধে
জনাব, জনাবা আর কুমারী ঔদাসীন্য
অন্তর্ভুক্ত হয় তাদের ডিজিটাল গতিতে
যখন ওইসব বাচ্চা-কাচ্চা বিছানায়,
প্রতি রাতে তাদের কাঁপা-কাঁপা হাতে
থাকেনা
এমনকি এক পেয়ালা শাকসবজির ঝোল!
হ্যাঁ, যাও, খুন করো শিশুদের অন্য
দেশে; হে অ্যামেরিকা, হে বন্দুক-বৎসল শক্তি!
তারপর খুনগুলো ধামাচাপা দিয়ে
উঠানের পশ্চাদভাগে পুঁতে রেখো।
তারপর জোরেশোরে বলতে থাকো তুমিই গণতন্ত্র,
কিন্তু সেই ক্ষুধার্ত অন্ধকারে
সেই সব বিষণ্ণ, হারিয়ে-যাওয়া চোখগুলো
তোমার বরফ-শীতল মিথ্যাগুলোর সত্য জানে;
যে তুমি তাদের ছোটো থলিতে থাকা
তাবৎ মার্বেল বিক্রি করে দিয়েছো
ওইসব পাণ্ডার কাছে, যারা প্রশংসা করে কারণ
সেগুলো তারা ফিরিয়ে দেবে না,
এবং তুমি চুরি করে এনেছো সেই রুটি
যা তাদের মুখের জন্য কেঁদে উঠেছিলো
কিন্তু তুমি তাকে ময়লা ময়দার কুণ্ডলি বানিয়েছো
এবং সেই কারণে, যখন চূড়ান্ত দৃষ্টান্তে,
তারা ঘুমানোর ফুরসৎ পায়, তাদের স্বপ্নগুলো
তোমাকে ভয়াবহ ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবে ডেকে ওঠে আর
তোমার ওপর ন্যস্ত করে সূর্যের সম্মোহন
যাতে তোমাকে পুড়িয়ে ধ্বংস করা যায়
যাতে লোভী আত্মা সব পালাতে থাকে,
আর মাঠের পর মাঠ কেবল ফলতে থাকে, ফলতে থাকে
সুন্দর সুন্দর বস্তু সব ছোটো ছোটো বাচ্চার
ক্ষুধার্ত পেটের খাবারের জন্য।
আরো প্রাজ্ঞ কিউবা
যে-একটা কবিতা লিখেছিলাম এই বছরের শুরুতে
সেখানে পুঁজিতন্ত্রকে বর্ণনা করেছিলাম
ক্ষিপ্ত মারমুখো কুত্তার পাল হিসাবে
যে কুত্তারা টাকার টুকরার জন্য একে অপরকে কামড়িয়ে মারে।
ওই চিত্রকল্পের সত্যকে আমরা নিরন্তর দেখে চলেছি
ইরাক আফগানিস্তান ইজরায়েল আর লেবাননে;
ওইসব লোভী কুত্তার চোয়ালের ভেতরে মৃত শিশুদের
ছিন্নভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মেয়েদের আর্তনাদ
কুত্তার ঘেউঘেউ-এ ডুবে যায়, যা তাদের দুঃখকে
কামড়িয়ে টুকরা-টুকরা করে। কিউবা-সম্মতভাবেই
আমরা জানি শান্তির জন্য আছে কেবল একটি প্রক্রিয়া:
মানুষের বয়ানের স্পষ্ট বোধগম্য অভিযাত্রা অব্যাহত থাকে
কাঙ্ক্ষিত সমাজতন্ত্রমুখী তাবৎ তরিকা ধরেই।
জন্তুরও অধিক জন্তুর পেট থেকে,
গিরিসংকটের সংক্রামক বিস্তার
আর অনাবশ্যক পণ্যের মহামারির এই সময়ে
আমি তোমার কথা বলি, হে জরুরি দ্বীপ, নীতিনিষ্ঠ মোকাম
সমস্ত বিপ্লবী লড়াকুর জন্য,
এই জ্বলজ্বলে সাইবারনেটিক সমুদ্রের মাঝে কাণ্ডারি,
তোমার স্বপ্ন-দেখা দ্রষ্টার চোখ নিয়ে
জেগে আছ তুমি—আরো প্রাজ্ঞ কিউবা।
দারুণ নাগরদোলা
আমার মনে পড়ে বুনো মন্ত্রোচ্চারণের সেই রাত—
ন্যাংটা স্তবক সব। কেটলিকে ডুগডুগি বানানোর যৌবন
আর তুমি সেখানে, হে তুড়ি-মারা নাগরদোলা!
আত্মবিভোর আমাদের দিকে তুমি নিক্ষেপ করেছো
ইতি আর নেতি, সেই যুদ্ধের শেষে—
যে যুদ্ধ আমাদেরকে আলাদা করেছিল
প্রতিবাদীদের প্রজন্ম হিসাবে।
তুমি বুঝেছিলে আমরা সকলেই ছিলাম
ক্যাফে ত্রিয়েস্তের সমাজে অথবা রাস্তার ধারে
পানশালায়, অ্যামেরিকা থেকে ভেগে যাওয়ার মতলবে;
বুঝেছিলে, আমাদের কবিতাই ছিল আমাদের পাসপোর্ট,
বুঝেছিলে, গ্রান্ট স্ট্রিট-অভিমুখী যে-কোনো মুহূর্তে
আমাদের যে-কেউ হাজির হতে পারতো তৃতীয় নয়নের কাছে,
যার পাতা উঠিয়ে দেখা যেতো
আসলে তুমিই ছিলে সেই চোখ। আর তুমি চলতে থাকো,
চলে যাও শহরের কেন্দ্রে, পুরনো হোটেলে, বুড়োদের
গভীরতা, বিষণ্ণতা আর মর্যাদাকে মালুম করে;
আর কী যথাযথ ছিল সেই অপেরা, কারণ গান হচ্ছে অস্তিত্ব
আর কবিতা তার উৎসমুখ। আমার মনে পড়ে একজনকে,
যে তোমাকে চুমু দেয়া থামায়নি, কারণ
তুমি অন্ধকারকে দেখিয়েছিলে আলোর অর্থ।
ভেনিস
আমি ক্ষুব্ধ ছিলাম
তোমার দেহের প্রতি,
ভেনিস!
যখন প্রথম দেখেছি
তোমার সস্তা দোকানপাট,
তোমার শিল্পিত মোনাফেকি
কাউমাউ করেছিল:
“কিনে নাও আমার
কুৎসিত রতিস্খলনের বুদবুদ,
বিস্ফোরিত যা
আমার ‘রিয়ালটো ব্রিজ’ উরুতে।
ধীরে ধীরে পেয়ে গেলাম
তোমার পার্শ্ব-রাস্তাগুলো,
যেখানে তুমি চর্চা কর পথচলা স্তব্ধতা
কোনো এঞ্জিনের
শব্দ ছাড়া,
এক আকাশের নিচে
যা বদলে যায়
এক ইতালীয় মদের
রোশনাই-এ
এবং তারপর
রূপান্তরিত হয়
গোধূলির মাঞ্জা-মারা
ঝকঝকে বৈভবে, যেখানে
স্নেহার্দ হৃদয়ের
লুকানো অগ্নিশিখার
সঙ্গী হয়ে থাকে
তোমার প্রতিটি পায়ের আওয়াজ
আর তা সম্পর্কে
কোনোই সন্দেহ নাই
তোমার চারিদিকের
জড়িয়ে-থাকা গাড়িগুলো
ছাড়াই তুমি আরো বেশি পূজনীয়,
যেখানে তুমি হতে পার
যা তুমি তাই-ই:
চলমান জল
যা বিনম্র আঘাত করে
আর সে-কারণে
তোমার কাছে এসেছি
এই মাঝরাতে
আর শুয়েছি
তোমার কালো দেহে
তার মোলায়েম জেল্লা নিয়ে
আর টেনে নিয়েছি চমকে-দেয়া
নীল আবরণ
আমাদের কম্পনের উপরিভাগে
কুয়াশা ভেদ-করা
আর লজ্জায় লাল-হওয়া

চাঁদের চিবুকের নিচে।

0 comments:

Note: Only a member of this blog may post a comment.